সুষ্ঠু নির্বাচনের গ্যারান্টি হল বর্তমান সরকারের পদত্যাগ বলে, মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী। বৃহস্পতিবার নয়াপল্টন দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি একথা বলেন।

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন-নির্বাচন কমিশনকে সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনে সব ধরণের সহযোগিতা দেবেন। এই বক্তব্য জনগণের মধ্যে হাসির খোরাক যুগিয়েছে। সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রধান অন্তরায় প্রধানমন্ত্রী নিজে, সুতরাং ইসি-কে তাঁর সহযোগিতা দেয়ার অর্থ হলো-আগামী জাতীয় নির্বাচনে ফন্দি ফিকির করার জন্যই যে তিনি সহযোগিতা দেবেন সে বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই, কারণ সেটির বহু স্পষ্ট প্রমান তিনি ইতোমধ্যে দিয়েছেন। 

কিভাবে ইসি সরকারী দলের ভোট সন্ত্রাস ও ডাকাতির ফলাফলের বৈধতা দেয় সেটি গত নির্বাচনগুলোতে ফুটে উঠেছে। শেখ হাসিনার কমিশনকে সহযোগিতা করার অর্থ হলো ইসি’র আত্মসমর্পন নিশ্চিত করা। সেই ইসি’র নির্বাচনে সাধারণ ভোটারদের বাড়িতে বসে থাকতে হবে, ভোট কেন্দ্রে যাওয়ার অধিকার থাকবে না। দেশে সুষ্ঠু নির্বাচনের একমাত্র গ্যারান্টি শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন।

তিনি আরো বলেন, সরকার পুলিশী চাপ দিয়ে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে নৈ:শব্দের ভীতিকর পর্যায়ে নিয়ে এসেছে। আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর বিবেকবর্জিত অমানবিক নিষ্ঠুরতায় বিরোধী দলের বিরুদ্ধে আগ্রাসী ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতেও পাইকারী গ্রেপ্তার ও প্রবল বন্যার স্রোতের মতো মিথ্যা মামলার অভিঘাতে মানুষের স্বাভাবিক জীবন-যাপন দু:স্বপ্নের মধ্যে কাটছে। 

আগামী নির্বাচন সরকারী দলের নাগালের মধ্যে রাখার জন্যই আইন শৃঙ্খলা বাহিনী বিএনপি-কে দমন করতে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। তাদের বানোয়াট মামলার শিকার করা হয়েছেন দেশের বর্ষিয়ান নেতা ও গুরুতর অসুস্থ বিএনপি জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য জনাব তরিকুল ইসলাম। 
তিনি বলেন, আই শৃঙ্খলা বাহিনীকে বেপরোয়া হওয়ার জন্য ক্ষমতাসীন মন্ত্রী ও উপদেষ্টারা ক্রমাগত মদদ দিয়ে যাচ্ছে। যেমন এইচ টি ইমাম বলেছেন-যেকোন মূল্যে ক্ষমতায় থাকতে হবে। যেকোন মূল্যে ক্ষমতায় থাকার ‘ডকট্রিন’ এর ওপর ভিত্তি করে চলা এইচ টি ইমামকে তার জীবনে অনেক সাফল্য এনে দিয়েছে। এই মতবাদের অর্থ হলো-রক্ত গঙ্গা বইয়ে দেশ অন্ধকারে তলিয়ে দিয়ে হলেও ক্ষমতায় থাকতে হবে। এই ‘যেকোন মূল্যে ক্ষমতায় থাকার জন্যই’ এইচ টি ইমাম’রা গণতন্ত্রকে নির্বাসিত করেছে, গুম-খুন আর ক্রসফায়ারের মনুষ্যত্বহীন কর্মসূচির দ্বারা।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন - বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আহমেদ আযম খান, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম আজাদ, সহ-দপ্তর সম্পাদক মুনির হোসেন প্রমুখ।

বিএনপির এই নেতা বলেন, শোনা যাচ্ছে-সামনের দিনগুলোতে সরকার নিজ দলের ক্যাডারদের দিয়ে নাশকতা সৃষ্টি করে বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর এর দায় চাপাবে। ককটেল বিষ্ফোরণসহ নানা ধরণের জ্বালাও-পোড়াওয়ের নাশকতা করা হবে পরিকল্পিতভাবে। আর বিএনপি নেতাকর্মীদেরকে এই নাশকতার দায়ে জড়ানো হবে। 

এজন্য নাকি আওয়ামী ক্যাডারদের সহযোগিতা করার জন্য আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে প্রয়োজনীয় নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সরকার এক গোপন সহিংস পরিকল্পনার ছক আঁটছে বিরোধী দলের কর্মসূচিকে জনগণের সামনে নানাভাবে বিভ্রান্ত ও কালিমালিপ্ত করার জন্য-যেভাবে তারা ২০১৪ ও ১৫ সালের আন্দোলনে নিজেরাই নাশকতা করে বিএনপি’র ওপর এর দায় চাপিয়েছে।

তিনি বলেন,  সরকার প্রধান নিজের ও তাঁর সরকারের অপকীর্তি ও অনাচারের ভয়ে সবসময় তটস্থ, তাঁর সিংহাসন টলমল করছে। যেকোন সময় পড়ে যাওয়ার আশঙ্কায় দমনের তরবারী নিয়ে তিনি ছুটে বেড়াচ্ছেন দিকবিদ্বিক। মোমবাতি নিভে যাওয়ার আগে যেমন দপ করে জ্বলে ওঠে, তেমনি পতনের আগে ব্যাপক দমননীতির আশ্রয় নিয়েছে সরকার।