বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম
আলমগীর বলেছেন, পুরুষতান্ত্রিক সমাজ থেকে নারীদের
বেরিয়ে এসে নেতৃত্ব দিতে হবে।
আজ সোমবার সকালে আন্তর্জাতিক নারী
দিবস উপলক্ষে জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের র্যালীপূর্ব সমাবেশে বিএনপি মহাসচিব এই
মন্তব্য করেন। নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে আন্তর্জাতিক নারী
দিবস উপলক্ষে জাতীয়তাবাদী মহিলা দল এই র্যালী করে। মহিলা দলের নেতা-কর্মীরা ‘নারী
নির্যাতন বন্ধ কর’, ‘বিনামূল্যে বেতনে
পড়ালেখার সুযোগ নারীদের জন্য খালেদা জিয়ার উদ্যোগ’সহ বিভিন্ন শ্লোগান সম্বলিত
প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে এই র্যালীতে অংশ নেন। কাকরাইল নাইটেঙ্গল রেস্তোরা হয়ে
বিএনপি কার্যালয়ে এসে শেষ হয়।
তিনি বলেন, ‘আজকে দুর্ভাগ্য এই জাতির পঞ্চাশ বছর পরেও আমরা একথা বলতে
পারি না যে, আমরা স্বাধীন। আমাদের মা-বোনেরা তারা
নিরাপদে চলাফেরা করতে পারে না। তারাও বলতে পারে না যে, তারা স্বাধীন। এই সরকার সকলের স্বাধীনতাকে হরণ করে নিয়েছে, বাক স্বাধীনতা হরণ করেছে, তাদের মৌলিক স্বাধীনতা-গণতান্ত্রিক অধিকারকে হরণ করে নিয়েছে।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘তখনই নারীদের অধিকার সংরক্ষন করা যাবে যখন সত্যিকার অর্থেই
বাংলাদেশে একটি গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠা হবে। আজকে এই দিনে আমি নারীদের
আন্দোলনে একাত্মতা ঘোষণা করছি এবং এই কথা বলতে চাই, সকলকে যে, পুরুষতান্ত্রিক সমাজ থেকে বেরিয়ে এসে
অন্ধকার থেকে বেরিয়ে আলোতে আসতে হবে সবাইকে এবং আপনাদেরকে নেতৃত্ব দিতে হবে।”
তিনি বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি, আজকে পুরুষ-নারী সবাই যদি আমরা সমবেতভাবে উদ্যোগ নিয়ে এই ভয়াবহ দানবকে সরানোর
জন্য কাজ করি তাহলে অবশ্যই আমরা আমাদের দেশকে মুক্ত করতে পারবো, আমাদের নারীদের মুক্ত করতে পারবো।’
বেগম রোকেয়াকে স্মরণ করে ফখরুল বলেন, ‘বেগম রোকেয়া এই উপমহাদেশে বিশেষ করে বাংলাদেশে নারীদের
উন্নয়নের জন্য, তাদেরকে অন্ধকার থেকে আলোতে নিয়ে
আসার জন্য তিনি প্রতিকৃতের ভুমিকা পালন করে্ছিলেন। তিনি সেই আলো জ্বালিয়েছিলেন
নারীদের মধ্যে যাতে করে তারা নারীরা বেরিয়ে আসেন এবং তাদের অধিকারকে আদায় করে নিতে
পারেন।’
খালেদা জিয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এরপরে যে নারী নেত্রীকে, যে রাজনীতিবিদকে সবচেয়ে বেশি শ্রদ্ধা আমি জানাতে চাই, তিনি হচ্ছেন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া। যিনি এই দেশে
মহিলাদের উন্নয়নের জন্য সবচেয়ে বড় কাজটি করেছিলেন যে, মেয়েদের লেখাপড়ার সুযো্গ-সুবিধা করে দেয়ার জন্য বিনা বেতন
তিনি গ্রেজুয়েশন পর্যন্ত পড়ার ব্যবস্থা করেছিলেন। এটা একটা যুগান্তকারী পদক্ষেপ
ছিলো দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার। আপনাদের অনেকের মনে থাকার কথা আমাদের দলের
প্রতিষ্ঠাতা স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান তিনিই প্রথম দেশে
মহিলা ও শিশু মন্ত্রণালয় এবং মহিলা অধিদফতর তৈরি করেছিলেন। তখনও পৃথিবী অন্যান্য
দেশগুলোতে করা হয়নি, তারা অনেক দিন পরে
মহিলাদের জন্য আলাদা কনভেনশন হয়েছিলো সেখানে মহিলাদের একটা স্বীকৃতি দেয়া হয়েছিলো।
সুতরাং যা কিছু কল্যাণকর যেমনটা অর্ধেক নারী, অর্ধেক নর। ঠিক একইভাবে নারীদের কল্যানের জন্য যা কিছু করেছে এই বিএনপির
নেতৃত্ব থেকেই সেটা করা হয়েছে।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আজকে শুধুমাত্র নারীরা নয়, বাংলাদেশের সমগ্র মানুষ তারা নির্যাতিত, তারা বন্দি, তারা অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আজকে দেখুন স্বাধীনতার সূবর্ণ জয়ন্তী পালিত হচ্ছে, এই স্বাধীনতার সূবর্ণ জয়ন্তীতে আমাদের যারা অধিকারের জন্য
আন্দোলন করছে, আমাদের ছাত্র নেতা, আমাদের লেখক, সাংবাদিক, শ্রমিক তাদের ওপর নির্মম নির্যাতন
চলছে।’
বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল
কবির রিজভী বলেন, ‘‘পত্রিকার খবরটি
আমার কাছে বিস্ময়কর মনে হয়েছে। মাননীয় প্রধান বিচারপতি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের
একটি মামলার শুনানীতে তিনি বলেছেন, অনেক কথা বলেছেন। প্রধান বিচারপতি আদালতের পাঠ্যক্রমের মধ্যে এটা উনি বলতেই
পারেন এবং তিনি যে পরামর্শ যেটা দিয়েছেন সেটা শিরোধার্য্।”
তিনি বলেন, ‘আমি একটা প্রশ্ন রাখতে চাই মাননীয় প্রধান বিচারপতি। যখন কোনো নাগরিকের কথা বলা, কোনো নাগরিকের মুক্ত কন্ঠে আওয়াজ তোলা, কোনো নাগরিকের কোন চিত্রাঙ্কন সে যদি করে, ব্যাঙ্গচিত্র করে, তাকে যদি সরকারি হেফাজতে খুন করা হয় তাহলে সেটাতে কি দেশের ভাবমূর্তি বৃদ্ধি পায় কিনা- এটা তো জনগন জানতেই পারে।”
‘আপনি প্রধান বিচারপতি। আপনি যে অভিমতগুলো দিয়েছেন সেটা অবশ্যই শিরোধার্য্। এই যে কথা বলেছেন যে, দেশের ইমেজ ক্ষুন্ন হয় ব্যাঙ্গচিত্র করলে। কিন্তু মানুষ খুন করলে, এই কথা বলার জন্য, এই কার্টুন আঁকার জন্য তাদেরকে যদি সরকারি হেফাজতে খুন করা হয় তাতে কী দেশের ইমেজ বাড়ে?”
মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক সুলতানা
আহমেদের পরিচালনায় র্যালীপূর্ব সমাবেশে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের
সদস্য আবদুস সালাম, মহিলা দলের সাবেক
সভাপতি নুরে আরা সাফা, মহিলা দলের যুগ্ম
সাধারণ সম্পাদক হেলেন জেরিন খান, কেন্দ্রীয় নেত্রী
নেওয়াজ হালিমা আরলি, নিলোফার চৌধুরী মনি
ও জাহান পান্না বক্তব্য রাখেন।