সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিত ও মাদক মুক্ত করতে যে সকল সুপারিশ রয়েছে সেগুলো বাস্তবায়ন না হলে সমাধান হবে না বলে চৌদ্দ দলের সেমিনারে বক্তরা দাবি করেন।
সোমবার সিরডাপ মিলনায়তনে ‘নিরাপদ সড়ক ও মাদক মুক্ত সমাজ’ শীর্ষক সেমিনার আয়োজন করে চৌদ্দ দল।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলির সদস্য ও ১৪ দলের মুখপাত্র মোহাম্মদ নাসিমের সভাপতির বক্তব্যে মোহাম্মদ নাসিম বলেন, “শেখ হাসিনার সরকার সব কিছুতে এগিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু কিছু কিছু ক্ষেত্রে সমস্যাগুলো এখনও সমাধানের পথে। সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিত ও মাদক এখনও সম্পূর্ণ মুক্ত হয়নি। এই সমস্যাগুলো আমরা এখনও সম্পূর্ণ সমাধান করতে পারিনি।
“প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বার বার নির্দেশ দিয়েছেন কিন্তু তার নিদের্শ বাস্তবায়ন হয়নি বলে সমস্যা এখনও সমাধান হয়নি। অনেক সমস্যা আছে যেগুলো সমাধানের জন্য যেসব সুপারিশ রয়েছে সেগুলো বাস্তবায়ন না হওয়অর কারণে তা সমাধান হয়নি।” “জিয়া, এরশাদ, খালেদা জিয়ার আমলে সৃষ্ট অনেক সমস্যা আমরা এখনও সমাধান করতি পারিনি। সড়কে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে যে সব সুপারিশ বিভিন্ন সময় এসেছে সেগুলো বাস্তবায়ন দেখতে চাই।”
“কারণ তখন আন্তরিকতা ছিলো তাই এটা সম্ভব হয়েছিলো। যানবাহনের চালকের অদক্ষতার কথা বলা হয়। চালকদের প্রশিক্ষণের কোনো ব্যবস্থা নেই। সরকার ১ লাখ চালককে প্রশিক্ষণ দিচ্ছে কিন্তু সেটা আমাদের দেশের জন্য নয়, এই চালকদের বিদেশে পাঠানো হবে।”
সাবেক নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান বলেন, “সড়কে বিরাজমান সমস্যা সমাধানে সব সরকারের আমলেই বিভিন্ন সুপারিশ আছে কিন্তু সেগুলো বাস্তবায়ন না হওয়ায় সমস্যার সমাধান হয়নি। সড়কে চাঁদাবাজির কথা বলা হয়, ৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকার সময় মোহাম্মদ নাসিম যখন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন তখন চাঁদাবাজি বন্ধ হয়েছিলো। “পরিবহন সেক্টরে দক্ষ চালক তৈরি করা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। অথচ আমরা চালকদের প্রশিক্ষণে ভর্তূকি দিতে পারছি না। সড়কের সমস্যা সমাধানে যেস সুপারিশ আসে সেগুলো বাস্তবায়নে কর্তৃপক্ষ করে দিতে হবে।”
খালিদ মাহমুদ চৌধুরী এ সময় বিএনপি-জামায়াত সরকারের সময়ের যোগাযোগমন্ত্রী নাজমুল হুদার বক্তব্যের ক্ষব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেন, “নাজমুল হুদা বঙ্গবন্ধুর জন্ম শতবাষির্কী এবং স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্ত্রী সবাইকে নিয়ে পালন করার জন্য সকল রাজবন্দিদের মুক্তির কথা বলেছেন। অবশ্যই আমরা সবাইকে নিয়ে বঙ্গবন্ধুর জন্ম শতবাষির্কী এবং স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্ত্রী উদযাপন করবো।
নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, “বিভিন্ন সরকারের সময় বিআরটিসিকে দুনীতিবাজ সংগঠনে পরিণত করা হয়েছিলো। দেশে হাইওয়ে বলে কিছু ছিলো না, নামে মাত্র হাইওয়ে ছিলো। পুরো সিস্টেমটাই দুর্বল করে ফেলা হয়েছিলো। জিয়া এরশাদ খালেদা জিয়ার সময় এই সমস্যাগুলো তৈরি হয়েছিলো। “এখন আমরা সেগুলো ঠিক করতে পারিনি। তবে প্রত্যেকটি সেক্টরে আস্তে আস্তে উন্নতি হচ্ছে।” “ তবে দুনীতিবাজদের নিয়ে নয়। যারা কারাগারে আছেন তারা অপরাধী, অপরাধীদের নিয়ে এতো বড় মহৎ কাজ আমরা করতে পারি না। আমরা সবাইকে জয়বাংলার পতাকা তলে আনতে চাই কিন্তু অপরাধীদেরকে নয়, অতীতের মতো অপরাধ যেনো না হয়।” সাবেক যোগাযোগ মন্ত্রী ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা তার বক্তব্যে বলেন, “সড়কে বিরাট বড় নৈরাজ্য চলছে। যানবাহনের ফিটনেন্স দেখার যন্ত্রপাতি নষ্ট হয়ে পড়ে আছে। চালকরা মাদক খেয়ে সড়কে নামে।
জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি সংসদ সদস্য শফিকুর রহমান বলেন, “মাদকসেবিদের সঙ্গে পুলিশের কোনো কোনো কর্মকর্তার যোগসাজোস আছে। শুনেছি মাদক দ্রব্য ইয়াবার একটি ট্যাবলেটের দাম ৪/৫ শ’টাকা। যারা দিনে ৪টা খায় তাদের ২৫০০ টাকার প্রয়োজন হয়। এই টাকা যোগাতে তারা চুরি, ছিনতাই, ডাকাতিতে নামে।
“আর কয়েক মাস পর আমরা বঙ্গবন্ধুর জন্ম শতবাষির্কি পালন হবে। সেই সঙ্গে স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী। সকল রাজবন্দিদের মুক্তি দিয়ে শুধু মাত্র দন্ডিত দাগি আসামী ছাড়া এই দুইটি উৎসব সবাইকে নিয়ে ঐক্যমতের ভিত্তিতে পালন করার প্রস্তাব করছি।” কলামিস্ট সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন, “সড়ক দূঘটনা বন্ধ করতে যে সব সুপারিশ মালা দেওয়া হয় সেগুরো বাস্তবায়ন হয় না। সুপারিশ বাস্তাবয়নের এই অবহেলা দুর করতে হবে।” জাতীয় পার্টির(জেপি) সাধারণ সম্পাদক শেখ শহীদুল ইসলাম বলেন, “বিচারহীনতার সংস্কৃতি দুর করতে হবে। এটা করতে না পারলে সমস্যার সমাধান হবে না। অপরাধীরা অপরাধ করে বেরেই যাচ্ছে, বিচার হচ্ছে না। এই বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।” “পুলিশের কাছ থেকে এই কাজে এরা সহযোগীতা পায়। আবার কোনো কোনো পুলিশ কর্মকর্তা ভালো কাজ করলে এ্র বিরুদ্ধে দাঁড়ালে দেখা যায় তাকে অন্যত্র বদলি করে দেওয়া হয়। এ সব বন্ধ করতে হবে।”
গোলটেবিল বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন, ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু, সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া।
আলোচনায় বক্তব্য রাখেন, জাতীয় পার্টির মহাসচিব মশিউর রহমান রাঙা, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি সাইফুল আলম, সাংবাদিক নেতা মনজুরুল আহসান বুলবুল, আমাদের অর্থনীতির সম্পাদক নাইমুল ইসলাম খান, জাসদের সাধারন সম্পাদক শিরিণ আখতার, সংসদ সদস্য এ্যারোমা দত্ত, সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির নেতা খন্দোকার এনায়েত উল্লাহ।