জোর চেষ্টা চালালেও জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান হতে পারছেন না বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ। প্রয়াত হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের ভাই জিএম কাদেরই চেয়ারম্যান থাকছেন। দেবর-ভাবির বিরোধ সামাল দিয়ে এরশাদপত্নী রওশনকে সন্তুষ্ট করতে তার জন্য 'প্রধান পৃষ্ঠপোষক' পদ সৃষ্টি করা হয়েছে।

শুক্রবার বনানী কার্যালয়ে জিএম কাদেরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত প্রেসিডিয়ামের সভায় এসব সিদ্ধান্ত হয়। শনিবার জাপার নবম কাউন্সিলে সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান থেকে প্রধান পৃষ্ঠপোষক হবেন রওশন। আমৃত্যু তিনি এ পদে থাকবেন। পদমর্যাদায় চেয়ারম্যানের ওপর থাকবেন প্রধান পৃষ্ঠপোষক। দলীয় প্রতীক শুধু তার গাড়িতেই থাকবে, যা এতদিন ধরে চেয়ারম্যানের গাড়িতে ব্যবহার হতো। তবে পদটি হবে আলংকারিক। দলের সব নির্বাহী ক্ষমতা আগের মতোই থাকবে চেয়ারম্যানের হাতে।

প্রেসিডিয়ামের সভায় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, কাউন্সিলে চেয়ারম্যান পদে জিএম কাদেরই একমাত্র প্রার্থী। মহাসচিব পদে একমাত্র প্রার্থী মসিউর রহমান রাঙ্গাঁ। তাই তাদের নির্বাচিত হওয়া নিশ্চিত।

সভায় সিদ্ধান্ত হয়, জাপায় সাতটি কো-চেয়ারম্যান এবং আটটি মহাসচিব পদ সৃষ্টি করা হবে। জেষ্ঠ্য নেতারা কো-চেয়ারম্যান হবেন। জাপা চেয়ারম্যান কো-চেয়ারম্যান ও প্রেসিডিয়ামের মতামত নিয়ে দল চালাবেন।

প্রেসিডিয়ামের সভায় চমক ছিল ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদারের উপস্থিতি। ছিলেন রওশনপন্থি হিসেবে পরিচিত নেতারাও। গত বছরের ডিসেম্বরে মহাসচিব পদ হারানোর পর শুক্রবারই প্রথম দলীয় সভায় যোগ দেন হাওলাদার। গত জুলাইয়ে এরশাদের মৃত্যুর পর জিএম কাদের জাপার চেয়ারম্যান পদে বসার পর এদিনই প্রথম দলীয় সভায় যোগ দেন আনিসুল ইসলাম মাহমুদও। রওশন এরশাদের মতো তিনিও জিএম কাদেরকে চেয়ারম্যান পদে মানতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন।

সভার পর জাপার মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গাঁ ব্রিফিংয়ে বলেন, এবারের মূল পরিবর্তন হচ্ছে, হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের সহধর্মিনী রওশন এরশাদ 'চিফ প্যাট্রন' হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। দলে তার সম্মান থাকবে সর্বোচ্চ। দলীয় সভা, সাধারণ সভা- সবজায়গায় চেয়ারম্যানের ওপর থাকবে তার পদমর্যাদা।

তিনি বলেন, চেয়ারম্যানের কাছে দলের সর্বোচ্চ ক্ষমতা থাকবে। যত সভা হবে, তাতে তিনি সভাপতিত্ব করবেন। তবে যেহেতু দলের প্রতিষ্ঠাতা হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের সহধর্মিনী এখনও জীবিত, তাই তিনি যত দিন আছেন, ততদিন 'চিফ প্যাট্রন' হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। প্রধান পৃষ্ঠপোষক ও চেয়ারম্যানের মতো কোনো বিরোধ হবে না বলেও দাবি করেন রাঙ্গাঁ।

চেয়ারম্যানের সর্বময় ক্ষমতা কমানোর কথা অনেক ধরে জাপা চললেও মসিউর রহমান রাঙ্গাঁ জানিয়েছেন, নবম কাউন্সিলে তা হচ্ছে না। তবে গঠনতন্ত্রের ২০/ক এর উপধারা প্রয়োগের আগে চেয়ারম্যান দলের কো-চেয়ারম্যান ও প্রেসিডিয়ামের মতামত নেবেন। একক সিদ্ধান্তে দল চলে না। জিএম কাদেরও একক সিদ্ধান্ত নিতে চান না।

২০১৬ সালের জানুয়ারিতে পদ সৃষ্টি করে জিএম কাদেরকে কো-চেয়ারম্যান করেছিলেন এরশাদ। রওশন ও তার অনুসারীরা এ সিদ্ধান্ত মেনে নিতে অস্বীকৃতি জানিয়ে 'বিদ্রোহ' করেন। এরশাদকে 'অব্যহতি' দিয়ে রওশনকে জাপার চেয়ারম্যান ঘোষণা করেন তার অনুসারীরা। চার মাস পর ২০১৬ সালের মে মাসে জাপার অষ্টম কাউন্সিলে স্ত্রী রওশনকে সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান করে পরিস্থিতি সামাল দিয়েছিলেন এরশাদ।

তবে এরশাদের মৃত্যুর পর দলের চেয়ারম্যান ও বিরোধীদলীয় নেতা পদ নিয়ে প্রকাশ্যে বিরোধে জড়ান দেবর-ভাবি। দুই পক্ষের সমঝোতায় বিরোধীদলীয় নেতার পদ রওশনকে ছেড়ে দেন জিএম কাদের। তাকে কাউন্সিল পর্যন্ত চেয়ারম্যান হিসেবে মেনে নেন রওশন। এরশাদের মৃত্যুতে শূন্য রংপুর-৩ আসনে রওশন পুত্র আল মাহী সাদ এরশাদকে লাঙ্গলের প্রার্থী করা হয়।

কয়েক মাস বিরতি দিয়ে চেয়ারম্যান পদ নিয়ে গত সপ্তাহে আবার অস্থিরতা সৃষ্টি হয় জাপায়। রওশন তার বাসায় জাপার জেষ্ঠ্য নেতাদের ডেকে নিয়ে চেয়ারম্যান হওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেন। মহাসচিব পদে সৌদি আরবে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত গোলাম মসিহকে চান।

প্রেসিডিয়ামের সভায় রওশনের পক্ষে বসচা: শুক্রবারের প্রেসিডিয়াম সভায় গঠনতন্ত্র সংশোধন কমিটির আহ্বায়ক সুনীল শুভ রায় প্রস্তাবনা উত্থাপন করেন। চেয়ারম্যান পদে রওশন এরশাদের প্রার্থিতার কথা তুলে ধরেন তার অনুসারী হিসেবে পরিচিত ফখরুল ইমাম এমপি।

তিনি বলেন, এরশাদপত্নীর জন্য ক্ষমতাহীন প্রধান পৃষ্ঠপোষক পদ সম্মানজনক নয়। পরে তিনি বলেন, ক্ষমতা বাড়াতে হবে। কিন্তু তার প্রস্তাব নাকচ হয়ে যায়। ২০/ক এর উপধারা বাতিলের প্রস্তাবও নাকচ হয়ে যায়।

এদিকে শনিবার সকাল ১০টায় রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের বাইরে হবে জাপার কাউন্সিলের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান। দুপুরে মিলনায়তনে হবে ভোটাভুটি। কাউন্সিলর ও ডেলিগেটদের মৌখিক ভোটে চেয়ারম্যান, কো চেয়ারম্যান, মহাসচিবসহ গুরুত্বপূর্ণ পদে নেতা নির্বাচন করা হবে। কিন্তু ভোটের আগেই নিশ্চিত হয়ে গেছে, কে কে নেতা হচ্ছেন।