দেশে করোনাভাইরাসের টিকার দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া শুরু হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার (০৮ এপ্রিল) এ কার্যক্রম শুরু হয়। যাঁরা গত ৭ ও ৮ ফেব্রুয়ারি বা তার আগে টিকা নিয়েছেন, তাঁরা আজ দ্বিতীয় ডোজ পাবেন। এ জন্য দুই দিন আগে থেকে মোবাইল নম্বরে এসএমএস যেতে শুরু করেছে। এসএমএস না গেলেও প্রথম ডোজের টিকা কার্ড নিয়ে আগের কেন্দ্রে গিয়ে টিকা দেওয়া যাবে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এ বি এম খুরশীদ আলম  জানান, যাঁরা ২৭ ও ২৮ জানুয়ারি এবং ৭ ও ৮ ফেব্রুয়ারি প্রথম ডোজ টিকা নিয়েছেন তাঁদের কারো কাছে কোনো কারণে এসএমএস না গেলেও আগের নির্ধারিত কেন্দ্রে টিকা কার্ড নিয়ে গিয়ে টিকার দ্বিতীয় ডোজ দিতে পারবেন। তিনি জানান, একই সঙ্গে যথারীতি টিকার প্রথম ডোজও চলতে থাকবে।

এদিকে অধিদপ্তরের পরিচালক (টিকাদান) ডা. শামসুল হক গণমাধ্যমকে বলেন, এ পর্যন্ত ৫৫ লাখ মানুষকে প্রথম ডোজের টিকা দেওয়া হয়েছে, দেশে মোট টিকা এসেছে এক কোটি দুই লাখ ডোজ। হাতে আছে ৪৭ লাখ ডোজ। আট লাখের ঘাটতি রয়েছে।

এর আগে স্বাস্থ্যসচিব লোকমান হোসেন মিয়া জানান, টিকা নিলেও আমাদের মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। আমরা যত বেশি সচেতন হব তত বেশি সুরক্ষিত থাকতে পারব। আমরা চেষ্টা করব, ডাক্তার-নার্সসহ সব পর্যায়ের মানুষকে নিয়ে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে মোকাবেলা করতে পারি কি না।

মন্ত্রিপরিষদসচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, দ্বিতীয় ডোজ টিকা নিয়ে অনেক ধরনের আলোচনা ছিল। আমাদের প্রধানমন্ত্রী পরিষ্কার করে বলে দিয়েছেন, ৮ এপ্রিল থেকে যে দ্বিতীয় ডোজ শুরু হওয়ার কথা, এটা যথারীতি চলবে।

এদিকে টিকা গ্রহণ নিয়ে দেশের বিভিন্ন জেলার সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে জনসাধারণের উদ্দেশ্যে বেশ কিছু নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এতে বলা হয়- 

১. বৃহস্পতিবার (৮ এপ্রিল) থেকে এসএমএস পাওয়া সাপেক্ষে দ্বিতীয় ডোজের ভ্যাকসিন নেওয়া যাবে।

২. যারা যোগ্য হবেন, তাদের মোবাইল ফোনে এসএমএস চলে যাবে। যাদের ভ্যাকসিন দেওয়ার পর দুই মাস অতিবাহিত হয়েছে, কিন্তু এসএমএস পাননি তারা অবশ্যই টিকা কার্ড এবং টিকা কার্ডের ফটোকপি নিয়ে টিকা কেন্দ্রে আসবেন।                    

৩. দ্বিতীয় ডোজের জন্য আগত সবাইকে টিকা কার্ড এবং জাতীয় পরিচয়পত্র নিয়ে আসতে হবে। কারো টিকা কার্ড হারিয়ে গেলে কিংবা কোনো কারণে নষ্ট হয়ে গেলে অনলাইন থেকে পুনরায় কার্ড ওঠানো যাবে।

৪. দুই মাস পূরণের আগে দ্বিতীয় ডোজের ভ্যাকসিন নেওয়া যাবে না, তবে পরে নেওয়া যাবে (১২ সপ্তাহ পর্যন্ত)।

৫. রেজিস্ট্রেশনকৃত হজযাত্রীদের বয়স ১৮ বছরের বেশি হলেই রেজিস্ট্রেশন করে ভ্যাকসিন নিতে পারবেন। (এমন হজযাত্রীর সংখ্যা প্রায় ৬০ হাজার। তাদের দ্রুত রেজিস্ট্রেশন করে ভ্যাকসিন নিতে বলা হয়েছে। সৌদি আরবের হজ কর্তৃপক্ষও জানিয়েছে, ভ্যাকসিন গ্রহণের প্রমাণপত্র ছাড়া এ বছর হজে অংশ নিতে দেওয়া হবে না)।

৬. প্রথম ডোজের টিকা দেওয়ার কর্মসূচি আগের মতোই এমনকি রমজান মাসেও অব্যাহত থাকবে, তাই প্রথম ডোজের টিকা নেওয়ার জন্য অনলাইনে রেজিস্ট্রেশন করে নির্ধারিত দিনে নির্ধারিত কেন্দ্রে গিয়ে টিকা নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

৭. পর্যাপ্ত ভ্যাকসিন আছে, শেষ হওয়ার ভয়ে কেউ ভীত হবেন না, গুজবে বিশ্বাস করবেন না, রোজা রেখে ভ্যাকসিন নেওয়া যাবে।

৮. কেন্দ্র পরিবর্তন করে আপাতত দ্বিতীয় ডোজের ভ্যাকসিন নেওয়া যাবে না।

৯. টিকা কেন্দ্রে বাধ্যতামূলকভাবে মাস্ক পরে আসতে হবে এবং প্রত্যেক টিকা গ্রহণকারীকে অন্তত তিন ফুট দূরত্ব বজায় রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

নির্দেশনায় আরো বলা হয়েছে, টিকাদাতা এবং স্বেচ্ছাসেবীদের সহযোগিতা করলে গ্রহীতার কাজ দ্রুত এবং সহজ হবে।

এ ছাড়া স্বাস্থ্যবিধি মানার জন্য বাইরে গেলেই ঘরে ফেরার পর বা যেখানে সুবিধা আছে সেখানে সাবান-পানি দিয়ে ২০ সেকেন্ড ধরে হাত ধোয়ার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা। সঠিক তথ্যের প্রয়োজনে ৩৩৩, ৯৯৯ অথবা ১৬২৬৩ হেল্প লাইনে ফোন করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

গত ২৭ জানুয়ারি কুর্মিটোলা হাসপাতালে একজন নার্সকে অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিন দেওয়ার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে করোনার টিকাদান কার্যক্রম শুরু হলেও আনুষ্ঠানিকভাবে তা শুরু হয় ৭ ফেব্রুয়ারি। একজন ব্যক্তিকে দুই ডোজ ভ্যাকসিন নিতে হবে।