বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের টিকা নেয়ার জন্য রেজিস্ট্রেশন করা দেয়া
হবে,
টেলিফোনে এমন প্রস্তাব রেখে অভিনব প্রতারণার ফাঁদ পেতেছে
একটি চক্র।
অভিযোগ উঠেছে যে টিকা রেজিস্ট্রেশনে
সহায়তার কথা বলে অনেকের মোবাইল ফোন থেকে ব্যক্তিগত তথ্য হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে, অনেকের মোবাইল ওয়ালেটের টাকা গায়েব করে দেয়া হয়েছে।
ঢাকার সাইবার ক্রাইম অ্যাওয়ারনেস
ফাউন্ডেশনের কাছে এ নিয়ে কয়েকটি অভিযোগ এসেছে বলে জানিয়েছেন সংস্থাটির
প্রেসিডেন্ট কাজী মুস্তাফিজ।
এ ব্যাপারে পুলিশের সাইবার অপরাধ বিভাগ
সবাইকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছে ।করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে বাংলাদেশে যখন
পুরোদমে টিকা দেয়ার কর্মসূচি শুরু হয়েছে, তখনই টিকা দেওয়ার নামে প্রতারণার নতুন এমন অভিযোগ সামনে এল।
কোভিড ১৯-এর টিকা নিতে গত দুই সপ্তাহ
ধরে অনলাইনে নিবন্ধনের কথা বলা হলেও সার্ভারের সমস্যা থাকায় অনেকেই নিবন্ধন করতে
পারেননি।
আবার প্রযুক্তিগত জ্ঞান বা
প্রয়োজনীয় ডিভাইস না থাকার কারণেও অনেকের পক্ষে নিবন্ধন করাও সম্ভব হচ্ছে না।
এই সুযোগটি কাজে লাগিয়ে একটি চক্র
গ্রাহকদের ফোন করে তাদের সহায়তা দেবার কথা বলে মোবাইল থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য
হাতিয়ে নিচ্ছে। এসব স্পর্শকাতর তথ্য কাজে লাগিয়ে অনেকের মোবাইল ওয়ালেটের টাকা
গায়েব করে দেয়া হয়েছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। কোভিড-১৯ এর টিকা নিবন্ধনের জন্য
গ্রাহকের নাম, বয়স, ফোন নম্বর, ঠিকানা, ভোটার আইডি কার্ডের নম্বর ইত্যাদির প্রয়োজন হয়।
প্রতারক চক্র এভাবে ফোন করে টিকা
নিবন্ধনের কথা বলে গ্রাহকদের নাম, ভোটার আইডি কার্ডের
নম্বর চেয়ে থাকে।
তারপর তারা বলে, 'আপনার ফোনে ওটিপি বা ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ড আসবে। সেটা বললে
নাম নিবন্ধন হয়ে যাবে। আর শিগগিরই টিকার তারিখ পেয়ে যাবেন।'
যখনই গ্রাহক তাদের কথামতো ওটিপি বলে
দেন,
তখনই তাদের মোবাইল ওয়ালেট যেমন বিকাশ, নগদ, বা রকেটের
অ্যাকাউন্টে রাখা টাকা গায়েব হয়ে যেতে পারে।
এখনও এ নিয়ে খুব বেশি সংখ্যক মানুষ
অভিযোগ করেন নি।
কিন্তু এখন থেকেই নিজেকে সাবধান
রাখার পাশাপাশি, পরিচিত সবাইকে সতর্ক করার পরামর্শ
দিচ্ছে পুলিশ।
যারা নিবন্ধন করতে পারছেন না
স্বাস্থ্য অধিদফতরের পক্ষ থেকে তাদের বলা হচ্ছে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে তথ্য
কর্মকর্তার কাছে গিয়ে নিবন্ধন করতে।
সেক্ষেত্রে ওই কর্মকর্তাদের সাথে এসব
তথ্য শেয়ার করা যেতে পারে।
ব্যক্তিগত তথ্য হাতিয়ে নেয়ার কারণে
বড় ধরণের ক্ষতির আশঙ্কা থাকে।
সাইবার ক্রাইম বিশেষজ্ঞরা বলছেন, টেলিফোনে অপরিচিত কারও সাথে নিজের ভোটার আইডি কার্ডের মতো
গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিগত তথ্য কিংবা ওটিপি শেয়ার করা যাবে না ।
বাংলাদেশে রোববার থেকে
আনুষ্ঠানিকভাবে করোনাভাইরাসের টিকাদান কার্যক্রম শুরুর পর সম্মুখসারির বিভিন্ন পেশার
মানুষ এবং যাদের বয়স ৪০ বা তার বেশি - তাদেরকে টিকা দেয়ার জন্য দ্রুত অনলাইনে
নিবন্ধন করতে বলা হচ্ছে।
আর এই অনলাইনে টিকা নিবন্ধনকে
কেন্দ্র করেই প্রতারণার ফাঁদ পেতেছে জালিয়াতরা।
তবে মানুষ এ ব্যাপারে সচেতন থাকলে
ঝুঁকি এড়ানো সম্ভব বলে মনে করছেন সাইবার ক্রাইম অ্যাওয়ারনেস ফাউন্ডেশনের
প্রেসিডেন্ট কাজী মুস্তাফিজ।
"অপরিচিত কোন কল, মেসেজ বা ইমেইলে সাড়া দেবেন না"
কাজী মুস্তাফিজ পরামর্শ দিয়েছেন, মানুষ যেন অপরিচিত ফোন কলের এমন কোনও আহ্বানে সাড়া না দেন।
করোনাভাইরাস প্রতিরোধে "টিকা
নিতে হলে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুন" - এমন বার্তা-সহ কোনও মেসেজ বা ইমেইল
পেলেও তাতে সাড়া না দেয়ার জন্য বলেছেন তিনি।
আবার অগ্রিম টিকা বুকিংয়ের জন্য
আগেই টাকা পাঠানোর কথাও বলতে পারে প্রতারক চক্র। এ সব ফাঁদে পা বাড়াতে মানা
করেছেন মি. মুস্তাফিজ।
এমন নানা উপায়ে আপনার ব্যক্তিগত
তথ্য হাতিয়ে নিয়ে অর্থ আত্মসাতের পাশাপাশি প্রতারক চক্র আরও ভয়াবহ ক্ষতি করতে
পারে বলেও তিনি জানিয়েছেন।
মি. মুস্তাফিজ বলেন "আমি
জাহালাম,
আবু তালেব না- এই খবরটি নিশ্চয়ই আপনাদের মনে আছে যেখানে
জাহালাম নামে এক ব্যক্তি মিথ্যা মামলার ফাঁদে পড়েন। পরে তিনি নির্দোষ প্রমাণ হন।
এখানে দুষ্কৃতিকারীরা জাহালামের ন্যাশনাল আইডির তথ্য ব্যবহার করে তাকে ফাঁসিয়ে
দিয়েছিলো। ফলে আপনার তথ্য এভাবে বেহাত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। যার পরিণতি ভয়াবহ হতে
পারে।"
" যেকোনো উপলক্ষকে টার্গেট করেই এ ধরণের প্রতারণা হয়। তাই সব সময় সতর্ক থাকতে হবে।"