ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি ও ঢাকা-১৪ আসনে সংসদ সদস্য আসলামুল হক মারা যাওয়ার পর ইতোমধ্যে আসনটি শূন্য ঘোষণা করা হয়। নির্বাচন কমিশন সূত্র জানিয়েছে, করোনাভাইরাস পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পর এ আসনে উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, এই আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছে।

গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত ৮৭ জন প্রত্যাশী মনোনয়ন পত্র সংগ্রহ করেছেন। এলাকায় তারা ইতোমধ্যে প্রচার প্রচারণার মাধ্যমে ভোটারদের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা চালাচ্ছেন। মনোনয়ন পেতে দলের হাই কমান্ডের সাথে বিভিন্ন মাধ্যমে তারা যোগাযোগ করছেন। 

তবে এই আসনটিতে এত প্রার্থীর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আলোচনায় রয়েছেন প্রয়াত সংসদ সদস্য আসলামুল হকের স্ত্রী মাকসুদা হক। 

তিনি সোমবার (৭ জুন) আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয় থেকে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেন।

মনোনয়ন ফরম তোলার বিষয়ে এক বিডি পলিটিকার টিভির সাথে একান্ত সাক্ষাৎকারে মাকসুদা হক বলেন, স্বামীর অসমাপ্ত কাজ গুলো সম্পন্ন করতেই নৌকার মনোনয়ন পত্র সংগ্রহ করেছেন তিনি। প্রয়াত আসলামুল হক এই এলাকার মানুষের জন্য সবসময় কাজ করে গেছেন। তিনি এলাকার মসজিদ, মাদরাসা, রাস্তাঘাট, স্কুল কলেজের জন্য অনেক কাজ করেছেন। এলাকার অনেক উন্নয়ন মূলক কাজ তিনি শুরু করেছেন তা এখনো সম্পন্ন হয়নি। সে সব কথা চিন্তা করে আমি আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চাচ্ছি। 

তিনি বলেন, আসলামুল হক ছিলেন আওয়ামী লীগের এক অন্যতম যোদ্ধা। তিনি তার দলের জন্য কাজ করতে গিয়ে অনেক সময় পরিবারকেও সময় দিতে পারেননি ঠিক মত। যিনি দলের জন্য অনেক কিছু ত্যাগ করেছেন। তিনি আওয়ামী লীগের একজন পরিচ্ছন্ন রাজনীতিবিদ হিসেবে এলাকার মানুষের জন্য অনেক কিছু করেছেন, যা এলাকাবাসী ও দলের সিনিয়র নেতারা জানেন।আমি তার সহধর্মিণী হিসেবে দেখেছি এলাকাবাসীর যে কোন সমস্যায় তারা আসলামুল হককে সরাসরি ফোন করতেন এবং তিনি তৎক্ষণাৎ সমস্যা গুলো সমাধানের চেষ্টা করতেন। 

আসলামুল হক ঢাকা-১৪ আসনের জনগনকে একটি সুন্দর ও পরিছন্ন এলাকা হিসেবে উপহার দিয়েছেন উল্লেখ করে আসলামুল হকের স্ত্রী বলেন, এলাকাতে কোন সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজি, ছিনতাইসহ যে কোন ধরণের অপরাধ থেকে মুক্ত ছিল। আগে এলাকায় কেউ নতুন বাড়ি নির্মাণ করতে গেলে মোটা অংকের চাঁদা দিতে হত সন্ত্রাসীদের, মেয়েদের রাস্তায় বের হওয়া নিরাপদ ছিল না। এখন আর সেই সমস্যা গুলো নেই। এখন সবাই নিরাপদ ভাবে চলাচল করতে পারে। কারও মনে কোন ধরণের কোন আতঙ্ক নেই। জনগনের জন্য একটি স্বপ্নের এলাকা তৈরি করে রেখে গেছেন আসলামুল হক। তার এই রেখে যাওয়া অবদান ও আরো কিছু অসমাপ্ত উন্নয়ন মূলক কাজ গুলো শেষ করার জন্য আমি নৌকার মাঝি হতে চাচ্ছি।  

তিনি আরও বলেন, আমি সব সময় তার পাশে থেকে আসলামুল হকের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড গুলো দেখেছি। তিনি কি ভাবে দলকে ভালবাসতেন, তার এলাকার জনগণকে কি ভাবে ভালবাসতেন, আমি স্ত্রী হিসেবে যদি তার রেখে যাওয়া অসমাপ্ত কাজ গুলো করার সুযোগ পাই তাহলে অবশ্যই তার আত্মা শান্তি পাবে। 

মনোনয়ন পাওয়ার বিষয়ে আপনি কতটা আশাবাদী এ বিষয়ে জানতে চাইলে মাকসুদা হক বলেন, মনোনয়ন পাওয়ার ক্ষেত্রে আমি দলের ওপর অবশ্যই আস্থাশীল। এখানে যোগ্য প্রার্থী অনেকেই আছেন। তবে আমার স্বামীর যে অবদান আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে ছিল সেই বিবেচনায় আমি মনোনয়ন পাওয়ার দাবি রাখি। আমি আশা করছি দল আমাকে মূল্যায়ন করবে এবং আমি জননেত্রী শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করতে ভূমিকা রাখতে পারবো।

যদি আওয়ামী লীগ আপনাকে মনোনয়ন না দেয় তাহলে কি স্বতন্ত্র প্রার্থী হবেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে মাকসুদা হক বলেন, আওয়ামী লীগের সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারকরা যাকে মনোনয়ন দেবেন তাকে অবশ্যই স্বাগত জানাতে হবে। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী যাকে মনোনয়ন দেবেন, তাঁর পক্ষেই সবাই কাজ করবো। আমার স্বামীর পাশে থেকে আমি রাজনিতির যতটা শিখেছি সেই অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে জনগনের সেবা করবো অবশ্যই। এছাড়া আমি মনোনয়ন পেলে ঢাকা ১৪ আসনের যে বিভক্তির রাজনীতি রয়েছে সেটা থাকবে না বলে আশা করছি।