ডিপার্টমেন্ট অব কম্পিউটার সাইন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং, ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশ

আন্তর্জাতিক মার্কেট ও কনজিউমার ডাটা প্রোভাইডার স্ট্যাটিস্টার রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০১৮ সালে বৈশ্বিক আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই) মার্কেটের আকার দাঁড়াবে প্রায় ৭,৩৪৫ বিলিয়ন ডলার, এবং এই মার্কেটেরআকার মাত্র ৭ বছর পরেই প্রায় ৮৯,৮৪৭ বিলিয়ন ডলারে এসে দাঁড়াবে। বিশ্ব জুড়ে এই মার্কেটের আকার বৃদ্ধির অন্যতম প্রধান কারণ হলো পৃথিবীর সকল প্রান্তের, সকল ধরণের ব্যবসায় এই প্রযুক্তির ব্যবহার ও প্রয়োগ।



স্ট্যাটিস্টার তথ্য অনুযায়ী সামনের বছরগুলোতে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের মার্কেট চাহিদা বাড়বে বহুগুণে (সুত্রঃ https://www.statista.com/statistics/607716/worldwide-artificial-intelligence-market-revenues/ )


নিঃসন্দেহে আগামী বছরগুলোতে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স প্রযুক্তির মার্কেটের বিশাল অংশ দখল করে রাখবে। এই ক্ষেত্রে গড়ে উঠছে বিশাল ইন্ডাস্ট্রি, তৈরি হচ্ছে অসংখ্য কর্মসংস্থান। এই বিপুল সম্ভাবনাময় খাতে তরুণরা তাদের ক্যারিয়ার গড়ে তোলার আগে তাদেরকে বুঝতে হবে যে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স আসলে কি।


আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স কি


মজার ব্যাপার হলো, এই প্রশ্নের উত্তর নিয়ে অনেকের মাঝেই বিতর্ক হয়। অনেকেই বিশ্বাস করেন যে, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স দ্বারা আসলে মুক্ত চিন্তার ও সচেতন কম্পিউটার সিস্টেম বোঝায়, যা জীবিত প্রাণীর মতই নিজস্ব মতামত পোষণ করতে পারবে। বাস্তবে আমরা এরকম কম্পিউটার সিস্টেম তৈরি করা থেকে এখনো বহুদূরে রয়েছি।


আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা এআই ভিত্তিক প্রোগ্রাম স্বয়ংক্রিয়ভাবে ডাটা অনুসন্ধান ও পরিমাপের মাধ্যমে ফলাফল নির্ণয় করে, যার ফলে প্রাপ্ত ফলাফল হয় ডাটা নির্ভর এবং পরিমাপযোগ্য।


আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের মার্কেট ভ্যালু বৃদ্ধির অন্যতম কারন হচ্ছে ব্যবসাক্ষেত্রে এই প্রযুক্তির বৈপ্লবিক প্রয়োগ। বিশ্বের অসংখ্য ব্যবসা ও সার্ভিস এখন “এআই” বা মেশিন লার্নিং সেবা” প্রদান করছে। সবচেয়ে সহজ উদাহরণ হলো এআই চ্যাটবট। মেশিন লার্নিং এর মাধ্যমে বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে শেখা এই চ্যাটবটের সাথে মানুষ কথা বলতে পারবে, এমনকি বিভিন্ন তথ্যও জানতে পারবে এই চ্যাটবটগুলোর কাছ থেকে। এই ক্ষেত্রে, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স হলো এমন এক ধরণের কম্পিউটার সিস্টেম যা এমন সকল কাজ করতে সক্ষম যা করার জন্য সাধারণত মানুষের বুদ্ধি ও অভিজ্ঞতার প্রয়োজন হয়। এমন কিছু কাজের উদাহরণ হলো স্পিচ রিকগনিশন, সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা (Decision Making) এবং এক ভাষা থেকে আরেক ভাষায় লেখা বা কথা অনুবাদ করা।


আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স এবং মেশিন লার্নিং


আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স নিয়ে কথা বলতে নিলে প্রসঙ্গতই মেশিন লার্নিং এর কথা উঠে আসবে। মেশিন লার্নিং আসলে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের একটি ক্ষেত্র বিভিন্ন গাণিতিক ও পরিসংখ্যানের কৌশল ব্যবহার করে ডাটা প্রদানের মাধ্যমে একটি মেশিনকে কাজ শেখানোর বা কাজের মান উন্নয়নের পদ্ধতিকে বলা হয় মেশিন লার্নিং। অর্থাৎ আমি কম্পিউটারকে প্রোগ্রাম করে দিবো না যে এই ক্ষেত্রে শুধুমাত্র এই কাজই করতে হবে, বরং আমি কম্পিউটারকে অনেক ডাটা বা তথ্য দিবো এবং স্ট্যাটিস্টিক্যাল টেকনিক প্রয়োগের মাধ্যমে কম্পিউটার নিজেই শিখতে থাকবে যে কোন ক্ষেত্রে কোন কাজ করলে সবচেয়ে ভাল ফলাফল পাওয়া সম্ভব।



মেশিন লার্নিং এর ফলে রোবোটিক সার্জারি আরো উন্নত ও নিরাপদ হচ্ছে (সুত্রঃ https://royalsociety.org/science-events-and-lectures/2016/summer-science-exhibition/exhibits/surgical-robot-machine-learnt-3d-imaging/)


ডাটানির্ভর সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও ব্যবসানীতি


বেশ কিছু কারণে মানুষ আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের দিকে ঝুঁকছে। ব্যবসাক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত গ্রহণ বা ফলাফল বিশ্লেষণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।এআই বা মেশিন লার্নিং ছাড়া যেকোনো ক্ষেত্রে “আনুমানিক বিশ্লেষণ” বা Predictive analytics এর মত গুরুত্বপূর্ণ কাজ করতে হবে মানুষের জ্ঞান এবং অনুমানের উপর ভিত্তি করে। যার ফলে প্রাপ্য ফলাফলে অনেক ভুল থাকতে পারে, কারন মানুষের ভুল হতে পারে এবং মানুষের নিজস্ব পক্ষপাত বা Bias থাকে।


নিরপেক্ষ এবং তথ্যনির্ভর সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সদারুণ সফলতা দেখাচ্ছে। যার ফলে ব্যবসায়ীরা ইনভেস্টমেন্টের ক্ষেত্রেও আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের মাধ্যমে যাচাই করে নিচ্ছেন যে তার লাভের সম্ভাবনা কতটুকু, অনুমান করে নিচ্ছেন যে আগামী বছরগুলোতে মার্কেট কোন দিকে এগিয়ে যাবে। এআই ব্যবহার করে খুচরা বিক্রেতারা বুঝে নিচ্ছেন যে তাদের টার্গেট কাস্টোমার কারা হবে, এবং সেই দিকে তাঁরা অটোমেটেড টার্গেটেড অ্যাডভার্টাইজিং করে অ্যাডভার্টাইজিং এর অর্থ অপচয় করা থেকে রক্ষা পাচ্ছেন। চিকিৎসাক্ষেত্রে রেডিওলজি ইমেজ দেখে চিকিৎসকদের অনুমান করার প্রয়োজন হচ্ছে না, এআই ভিত্তিক ইমেজ রিকোগনিশনের মাধ্যমে সিস্টেম নির্ণয় করতে সক্ষম হচ্ছে যে কোথায় কোন ত্রুটি রয়েছে।


প্রয়োজন অধিক মানব দক্ষতা ও অধিক বিনিয়োগ


আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স এবং মেশিন লার্নিং এর সঠিক প্রয়োগের জন্য ডাটা সাইন্টিস্ট এবং ডোমেইন এক্সপার্টদের একসাথে মিলে কাজ করে সমাধান বের করতে হয়। বর্তমানে অনেক ব্যবসাতেই এমন পরিকাঠামো থাকে যে তাদের বিপুল পরিমান ডাটা জমা রাখতে হয়। এই ধরণের ব্যবসায়িক পরিকাঠামোতে মেশিন লার্নিং এর মত প্রযুক্তি থাকা বাঞ্ছনীয়।স্বাভাবিকভাবেই,আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স এবং মেশিন লার্নিং এর প্রোগ্রাম তৈরি করার জন্য সাধারন প্রোগ্রাম তৈরি করার থেকে মেধা এবং অর্থ দুই দিক থেকেই বেশি বিনিয়োগের প্রয়োজন হয়


সাইবার সিকিউরিটি ও আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স


মানুষের নিরাপত্তা ও সাইবার সিকিউরিটির ক্ষেত্রেও আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স এবং বিশেষ করে ডাটা সাইন্স উল্লেখযোগ্য অবদান রাখছে। বিগত সময়ে সাইবার সিকিউরিটি সলিউশন মূলত সিগনেচার-বেজড ব্ল্যাকলিস্টিং বা কোরিলেশন রুলসের উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হতো। এই পদ্ধতিগুলো এখন যথেষ্ট নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দিতে পারে না। আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ও ডাটা সাইন্সের যথার্থ প্রয়োগের মাধ্যমে আরো উন্নত আর আধুনিক সাইবার সিকিউরিটি সিস্টেম তৈরি করা হচ্ছে। এন্ডপয়েন্ট প্রোটেকশন থেকে শুরু করে ইনসাইডার থ্রেট ডিটেকশনেও ডাটা সাইন্স অবদান রাখছে। বিশেষ করে “ইউজার বিহেভিওর মনিটরিং” এর ক্ষেত্রে এটা উল্লেখযোগ্য অবদান রাখছে। ইউজারের বর্তমান কাজ বা অ্যাকটিভিটি সর্বদা তার অতীতের কাজের সাথে তুলনা করে নির্নয় করা হয় যে ইউজার কোন ধরণের জিনিষ খুঁজতে চাচ্ছে। এই কাজগুলো ডাটানির্ভর অ্যানালিটিক্স ছাড়া সম্ভব নয়।

আমাদের নিকট ভবিষ্যতের অন্যতম প্রভাববিস্তারকারী প্রযুক্তি হবে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স এবং এর বিভিন্ন শাখা। আধুনিক বিশ্বের সাথে একতালে চলার জন্য আমাদেরও এই খাতে সময়, অর্থ এবং মেধার বিনিয়োগ করার বিকল্প নেই।